শীত এলেই অনেকের রাতের সঙ্গী হয়ে ওঠে মোজা। ঠান্ডা পা ঢেকে আরামের ঘুম এ যেন নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু এই সামান্য আরামের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন কিছু প্রভাব, যা ছুঁয়ে যায় দাম্পত্য বা সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাকেও। শরীরের তাপমাত্রা, রক্তসঞ্চালন ও আরামের অনুভূতি সব মিলিয়ে ঘুমের সময় মোজা পরা কি শুধু স্বস্তির কারণ, নাকি সম্পর্কের উষ্ণতায়ও ফেলে নীরব ছাপ? শীতের এই ছোট অভ্যাস নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। ঘুম ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মোজার ভূমিকা রাতে ঘুম শুরু হওয়ার সময় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে কমতে শুরু করে। এই শরীরের ‘কোর টেম্পারেচার’ কমে গেলে মস্তিষ্ক ঘুমের সংকেত পায় এবং ঘুম দ্রুত আসে। পায়ের মতো ‘ডিস্টাল’ বা কণা অংশ গরম রাখা হলে রক্তনালী প্রশস্ত হয় এবং শরীরের কোর তাপমাত্রা দ্রুত কমে, যা ঘুমাতে সাহায্য করে। এই জন্যই স্নায়ুবিশেষজ্ঞরা ঘুমের আগে পায়ের তাপমাত্রা বাড়ানোকে ঘুম একটিভেটরের মতো কাজ বলে থাকেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা পরিবেশে মোজা পরে ঘুমালে দ্রুত ঘুম আসে, দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় এবং মধ্যরাতের হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় না। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শীতে পা গরম রাখা আরামদায়ক এবং শীতের শুষ্কতা ও ত্বকের ফাটা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্ত সঞ্চালনও কিছুটা উন্নত হতে পারে। এছাড়া বিবিসি তে প্রকাশিত গবেষণামূলক তথ্য অনুযায়ী, যারা মোজা পরে ঘুমায় তাদের ক্ষেত্রে আনন্দ অনুভব বা চরমসুখ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০শতাংশ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে। যদিও এই ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন আছে। আরও পড়ুন:  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় পেঁয়াজ পাতা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কমলা শরীর হাইড্রেটেড রাখে শিম মোজা পরে ঘুমালে কি যৌনজীবনে কিছু বদলায়? সরাসরি ‘মোজা পরে ঘুমালে যৌনজীবনে প্রভাব পড়ে’ এই বিষয়ে কোনও বড় কাঠামোগত বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তবে ঘুমের মান ও রিলাক্সেশনের উপর ইতিবাচক প্রভাব থাকলে সাধারণত শরীর ও মন দুইই ভালো থাকলে যৌন অভিজ্ঞতাও উন্নত হয়, কারণ সুখী ঘুম হরমোনের ভারসাম্য স্থির রাখতে সাহায্য করে। ঘুম ও যৌনস্বাস্থ্য দুটোই শরীরের সার্বিক স্নায়ু-হরমোন সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে। স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, যদি মোজা পরে ঘুমালে ঘুমের মান উন্নত হয়, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং শরীর আরাম বোধ করে, তাহলে এর মধ্যম-মাধ্যমিক প্রভাব সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এটি সরাসরি প্রমাণিত বা নিশ্চিত কোনো যৌন বিজ্ঞান গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত নয়। মোজা পরে ঘুমানোর কিছু সতর্কতা অত্যন্ত আঁটসাঁট মোজা রাতে পরলে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা শরীরের জন্য বিপজ্জনক পর্যন্ত হতে পারে। বাতাস চলাচল না হওয়া মোজা পায়ে অতিরিক্ত ঘাম এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হার্ট-শিরার রোগ বা রক্ত সঞ্চালনের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকলে ডাক্তার পরামর্শ নেওয়া উচিত। মোজা, ঘুম ও সম্পর্ক শীতে মোজা পরে ঘুমানোর অভ্যাসটি আপনার ঘুমের মান বাড়াতে, পা গরম রাখতে ও আরামের অনুভূতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই সুস্থ ঘুম ও শিথিলতা যদি সম্পর্কের সময় শরীর ও মনকে প্রস্তুত রাখে তাহলেও সেটা একটা পাশাপাশির ইতিবাচক ইফেক্ট হিসেবেই দেখা উচিত, সরাসরি যৌন জীবনকে বদলে দেয় এটা প্রমাণিত নয়। তবে সাধারণ শারীরিক আরাম ও ভালো ঘুম দুটি মিলেই সম্পর্কের মান উন্নত করার সম্ভাবনা রাখে। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হেলথ লাইন জেএস/