সরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা নবম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। পে কমিশন গঠন থেকে শুরু করে সুপারিশের সময়সীমা নির্ধারণ–সব প্রস্তুতি থাকলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে নতুন পে-স্কেল কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই ইঙ্গিত মিলছে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে। ফলে বহুল আলোচিত এই বেতন কাঠামোর সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় আরও ঘনীভূত হচ্ছে।গত জুলাই মাসে নবম জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনও চূড়ান্ত প্রস্তাব আসেনি।কমিশন সূত্র জানায়, বেতন কাঠামোর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় সুপারিশ চূড়ান্ত করতে সময় লাগছে।এর মধ্যেই অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, নবম পে-স্কেল কার্যকরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার। তার মতে, নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এতে রাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়গুলো গভীরভাবে যুক্ত। স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ বাস্তবসম্মত নয় বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। আরও পড়ুন: বেতন গ্রেড নিয়ে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের জন্য সুখবরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত খসড়ায় বর্তমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১৩টি গ্রেডে আনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে গ্রেড কাঠামোর এই বড় পরিবর্তন নিয়ে কমিশনের ভেতরেই আরও আলোচনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এখনও অন্তত তিনটি বৈঠক বাকি রয়েছে।সব মিলিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রত্যাশিত নবম পে-স্কেল বর্তমান সরকারের আমলে কার্যকর হচ্ছে না–এমন ধারণাই এখন জোরালো হচ্ছে। পে-স্কেল ঘোষণার সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব যে পরবর্তী সরকারের ওপরই যাচ্ছে, সে ইঙ্গিত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে। অথচ বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ আসতে পারে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। এই অল্প সময়ের ব্যবধানে সুপারিশ পর্যালোচনা, অনুমোদন ও গেজেট প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।পে-স্কেল বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কর্মচারী সংগঠনগুলো এর আগে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কমিশনের সুপারিশ জমার আলটিমেটাম দিয়েছিল। সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় এবং বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তারা আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।সবশেষ পরিস্থিতিতে নবম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে–এটাই এখন সরকারি চাকরিজীবীদের বড় উদ্বেগ।