কনকনে শীত আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরান ঢাকা। সচরাচর যেসব অলিগলিতে মানুষের চাপে হাঁটা দায়, সেই পথঘাট অনেকটাই জনশূন্য দেখা গেছে। শীতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, সদরঘাট, ইসলামপুর ও ধোলাইখালের ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে লোকসমাগম ছিল একেবারেই কম। সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এবং হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় কুলিদেরও বসে থাকতে দেখা যায়। বেলা গড়ালেও মানুষজনের আনাগোনা ছিল সীমিত। লক্ষ্মীবাজার এলাকায় চায়ের দোকানে বসে থাকা রিকশাচালক রহমত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাস্তাঘাটে মানুষ নাই, ভাড়াও নাই। সকাল থেইকা মাত্র দুইটা ক্ষ্যাপ মারছি। এই ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হইয়া আসে, বেশিক্ষণ রিকশা চালানো যায় না।’ মহানগর কোর্ট এলাকায় কাজে আসা শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। পুরান ঢাকার জ্যাম আজ নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো হরতাল চলছে, আসলে সবই শীতের দাপট।’ আরও পড়ুনতীব্র শীতে জবুথবু ঢাকাবাসী, দেখা নেই সূর্যেরকেরানীগঞ্জে শীতবস্ত্র বিক্রিতে ভাটা, হতাশ ব্যবসায়ীরা হাসপাতালগুলোতেও তীব্র শীতের প্রভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। এই রোগীদের বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন চিকিৎসক বলেন, দুদিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন শিশু ও বয়স্ক রোগী সর্দি-জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। কুয়াশা ও ধুলার কারণে ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যেন মানুষ পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরে এবং প্রয়োজন ছাড়া ভোরে বা রাতে ঘরের বাইরে বের না হয়। পুরান ঢাকার কাপড়ের পাইকারি বাজার ইসলামপুরেও শীতের প্রভাব স্পষ্ট। ব্যবসায়ীরা জানান, তীব্র ঠান্ডার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসতে পারছেন না। সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় মালামাল সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাপড় ব্যবসায়ী সুমন ইসলাম বলেন, সব মিলিয়ে শীতের এই দাপটে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরান ঢাকার জনজীবন ও অর্থনীতি। এমডিএএ/বিএ/এএসএম