ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছয়টি রাজ্য নিয়ে একটি খ্রিস্টান আবাসভূমি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’র (এসএফজে) নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন। তার প্রস্তাবিত এই আবাসভূমির নাম ‘ট্রাম্পল্যান্ড’ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।নতুন দেশের প্রস্তাবের পাশাপাশি নতুন একটি মানচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে চীনের অংশ হিসেবেও দেখানো হয়েছে। এসএফজের নেতা গুরপতবন্তের এমন প্রস্তাবে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জায়গায় খ্রিস্টানদের বড়দিনের উদযাপনে বাধা দেয়া বা হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বড়দিনের সময়ে ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের ওপর ৬০টিরও বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। খ্রিস্টধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। খ্রিস্টানদের ওপর এসব হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ট্রাম্পল্যান্ড গঠনের ডাক দেয় এসএফজে। সংগঠনটি বলছে, ভারতের খ্রিস্টান সম্প্রদায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও নিপীড়নের মুখে পড়ছে, যার ফলে তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় প্রয়োজন। আরও পড়ুন: হাদির ঘাতকদের গ্রেফতারের গুঞ্জন নাকচ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সংগঠনটি তার প্রস্তাবিত ‘ট্রাম্পল্যান্ড’-এর একটি মানচিত্রও প্রকাশ করেছে। এতে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরা ও আসাম—এই ছয়টি রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এসএফজের মতে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের আওতায় এই অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন শিখস ফর জাস্টিস বা এসএফজে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্য ঘিরে ‘খালিস্তান’ নামে একটি পৃথক শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোকে ভেঙে নতুন দেশ গড়ার ডাক দিলো সংগঠনটি। চলতি সপ্তাহে এক ভিডিও বার্তায় এসএফজে নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন ভারতের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর বাড়তে থাকা হুমকির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সাংস্কৃতিক, শারীরিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং তাদের সুরক্ষায় জোরালো আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন। আরও পড়ুন: হাদির ঘাতকদের ভারতে প্রবেশের বিষয়ে যা বলছে মেঘালয় পুলিশ-বিএসএফ পান্নুন দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পই একমাত্র বিশ্বনেতা যিনি এই পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করার সাহস, ক্ষমতা ও সামর্থ্য রাখেন। তিনি অভিযোগ করেন, বড়দিনের সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সংগঠিত সহিংসতা, হামলা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এসএফজে নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে শুধু খ্রিস্টান নয়, পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, ভারতে বাইবেল প্রচারকে অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে, গির্জায় অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, খ্রিস্টান বসতিতে হামলা চালানো হচ্ছে এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুত ও আতঙ্কিত করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে এসএফজে। এর মধ্যে উপাসনাকারীদের ওপর সহিংসতা, গির্জা ভাঙচুর এবং বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের একটি বক্তব্যেরও উল্লেখ করেন, যেখানে ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণার কথা বলা হয়েছিল।