ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক বিদেশি সহায়তা হ্রাসের পর এবার মানবিক সহায়তায় নতুন করে ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের সঙ্গে নতুন এক মডেলের আওতায় সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) এই সহায়তার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল অঙ্কের সহায়তা তহবিল থেকে কোনো অর্থ পাবে না যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও গাজা। খবর রয়টার্সের।মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, নতুন এই তহবিলের মাধ্যমে আগামী বছর ১৭টি দেশের কয়েক কোটি মানুষের ক্ষুধা ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করা হবে। সহায়তা পাওয়ার তালিকা ও বাদ পড়া দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জেনেভায় জানিয়েছেন, তারা ১৭টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করবেন। এই তালিকার মধ্যে ইউক্রেন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, নাইজেরিয়া ও সুদানের মতো দেশগুলো রয়েছে। তবে জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান টম ফ্লেচার স্পষ্ট করেছেন যে, জাতিসংঘের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকা যেমন ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও গাজা যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন মডেলের অধীনে কোনো অর্থ পাবে না। তিনি জানান, এই দেশগুলোর সহায়তার জন্য জাতিসংঘকে অন্য দাতা বা উৎসের সন্ধান করতে হবে। গাজার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি জেরেমি লেউইন জানান, গাজা উপত্যকার সহায়তা কার্যক্রম একটি ‘আলাদা ট্র্যাকে’ বা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির পর সেখানে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর কাজের গতি বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ৩০ কোটি ডলারের অনুমোদন দিয়েছে। গাজার জন্য তহবিলের দ্বিতীয় ধাপে যুক্তরাষ্ট্র আরও দাতা সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আরও পড়ুন: গাজায় শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে যা বললেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, প্রতিশ্রুত এই ২০০ কোটি ডলার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) তদারকিতে ব্যয় করা হবে। নতুন এই মডেলের লক্ষ্য হলো মানবিক সহায়তার অর্থায়ন ও বিতরণ আরও দক্ষ করা এবং অর্থের ব্যবহারের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। জেরেমি লেউইন বলেন, ‘আমরা এমন কিছু দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছি যেখানে আমাদের স্বার্থের মিল রয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাভাবনা করে আরও দেশ এই তালিকায় যুক্ত করা হবে।’ জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জাতিসংঘের মানবিক তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩৮ কোটি ডলারে, যা বৈশ্বিক মোট তহবিলের মাত্র ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ এর আগের বছর এই অংক ছিল ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলার এবং ২০২২ সালে ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭২০ কোটি ডলার। মূলত জার্মানির মতো পশ্চিমা দাতা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোয় মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। তহবিলের এই সংকটের কারণে জাতিসংঘ ২০২৬ সালের জন্য তাদের সহায়তা আবেদন কমিয়ে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার করেছে, যা ২০২৫ সালের চাহিদার অর্ধেক। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই প্রতিশ্রুতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।