বাংলাদেশে এলে মনে হয় দেশেই আছি: সালমান মির্জা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা খুব বড় সময়ের নয়। তবে মাত্র ১১ টি-টোয়েন্টিতেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তরুণ প্রতিভাবান পাকিস্তানি পেসার সালমান মির্জা। শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আলো কেড়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জায়গা পাকা করেছেন। আছেন পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভাবনায়ও। তরুণ এই ক্রিকেটার এবারই প্রথম এসেছেন দেশের বাইরে কোনো ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে। ঢাকা ক্যাপিটালসের জার্সিতে ইতোমধ্যে একটি ম্যাচ খেলেও ফেলেছেন। বাংলাদেশে নিজের অভিজ্ঞতা, ক্রিকেট ক্যারিয়ার, পাকিস্তান ক্রিকেট এবং বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সময় সংবাদে দেয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন পাকিস্তানি এই বাঁহাতি পেসার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাফিজ ইয়াকিন রাজিন।বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার এসেছেন। কেমন লাগছে বাংলাদেশের খাবার, সংস্কৃতি ও দর্শক উন্মাদনা?সালমান: বাংলাদেশ প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি। এখানকার সংস্কৃতি, লোকজন অনেকটা পাকিস্তানের মতোই। অনেকটা মনে হয় দেশেই আছি। খাবার-দাবারও অনেকটা একই। কিছু কিছু আইটেম একটু আলাদা কিন্তু অনেক ভালো। আমি চেষ্টা করছি বাংলাদেশের স্থানীয় খাবারগুলো খাওয়ার। সময়টা খুবই উপভোগ করছি।প্রথমবার ঢাকা ক্যাপিটালস ফ্র‍্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলতে এলেন। এখন পর্যন্ত এই ফ্র‍্যাঞ্চাইজির সুযোগ-সুবিধা কেমন লেগেছে?সালমান: ঢাকা ক্যাপিটালস ফ্র‍্যাঞ্চাইজি অসাধারণ। কারণ তারা আমাদের জন্য বেশ রিল্যাক্স পরিবেশের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটা খেলোয়াড়দের জন্য খুব জরুরি। ঢাকা ক্যাপিটালসের ম্যানেজমেন্টও ভালো। আশা করি দল খুব ভালো করবে টুর্নামেন্টে।২০২১ সালে একবার পিএসএলে খেলেছিলেন। এরপর আবার ২০২৫-এ সুযোগ পেলেন। মাঝের সময়টাতে আলোচনার বাইরে থাকার কারণ কী?সালমান: ওই সময়ে কিছুই হয়নি। আমি দলের সঙ্গেই ছিলাম। ২০২১-এ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল, ২০২২-এ দলের সঙ্গে ছিলাম কিন্তু ম্যাচে খেলার সুযোগ পাইনি। ক্রিকেটে এমনটা হয়। কখনো ম্যাচে খেলতে পারব, কখনো পারব না। এরপর ২০২৩, ২০২৪ এ আমি পিএসএলে ছিলাম না। ওই সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। জিম্বাবুয়ে গিয়েছি খেলতে। এরপর পাকিস্তান এসে ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ খেলেছি। পিএসএল খেলেছি।বিশ্বকাপের আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে ডাক পেয়েছেন (শ্রীলঙ্কা সিরিজ)। সামনে বিশ্বকাপ। এই সময়টাকে নিয়ে কিভাবে পরিকল্পনা করছেন?সালমান: আমি কখনোই এত বড় পরিকল্পনা করি না যে ২-৩ মাস পরে কী হবে। ছোট লক্ষ্য হলে সেটা অর্জন করা সহজ হয়। সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আসছে। চেষ্টা করব ওই সিরিজে পারফর্ম করার এবং সিরিজ জেতার। বিশ্বকাপে গেলে ইনশাআল্লাহ লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলার এবং বিশ্বকাপ জেতার।বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার মনে হয় কাকে?সালমান: অনেক ক্রিকেটারই আছে। একজনের নাম নেয়া কঠিন। তানজিদ তামিম আছে, সাইফ হাসান আছে। সাইফকে কয়েকদিন ধরে দেখছি, যে পরিমাণ ছক্কা ও মারে, আমার ধারণা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি ছক্কা ও মারে। ও সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার।পাকিস্তান দলে শাহিন আফ্রিদি এবং হারিস রউফের মতো বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন পেসারদের সঙ্গে খেলেন। এটা চাপের নাকি সুবিধাজনক?সালমান: ওদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে কোনো চাপ অনুভব করি না। আমি তাদেরর সঙ্গে অনেকদিন ধরে আছি (পিএসএলে ওকই দলের হয়ে খেলেন)। আমাদের ভাইয়ের মতো সম্পর্ক। আমি একদমই চাপ অনুভব করি না। উল্টো আমার উপকার হয়৷ কারণ এত বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে থাকলে শেখার অনেক সুযোগ পাওয়া যায়। কোনো পরিস্থিতি যদি কঠিন লাগে, তখন তাদের সহায়তা নিয়ে ওই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। তাদের সঙ্গে খেলা উপভোগ করি।বিশ্বকাপ হবে ভারতে, পাকিস্তান খেলবে শ্রীলঙ্কায়। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন?সালমান: ক্রিকেটে এসব হওয়া উচিত না। যদি আপনি ক্রিকেটে রাজনীতি আনেন এবং হাইব্রিড মডেলে নিয়ে যান.......চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানে হওয়ার কথা ছিল, ভারতের কারণে আমাদের হাইব্রিড মডেলে করতে হয়েছে। এখন বিশ্বকাপেও সেটা হচ্ছে। খেলা ভারতে, আমাদের শ্রীলঙ্কায় খেলতে হচ্ছে। ক্রিকেটকে যদি রাজনীতির বাইরে রাখা যায়, এই খেলার জন্য অনেক ভালো, ক্রিকেটারদের জন্য ভালো। তবে যারা যেভাবে করবে, তাদের ওইভাবেই সামাল দিতে হবে।আরও পড়ুন: নোয়াখালীকে হ্যাটট্রিক হারের লজ্জায় ডুবিয়ে সহজ জয় তুলে নিলো রাজশাহী চলতি বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে দুই দলের মধ্যে কোনো হ্যান্ডশেক হচ্ছে না। খেলোয়াড়দের মধ্যে সবধরনের কথাবার্তাও বন্ধ। এটাকে কিভাবে দেখেন?সালমান: এটা খুবই খারাপ হচ্ছে। ক্রিকেটকে বলা হয়, ভদ্রলোকের খেলা। এটাকে সেভাবে রাখলেই ভালো হয়। ক্রিকেটে এসব বিষয় যে আনা হচ্ছে, এটা ক্রিকেটের জন্য একদমই ভালো কিছু নয়। ক্রিকেটকে ক্রিকেটের জায়গায় থাকতে দেয়া উচিত। যেভাবে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলার মতো খেলে আসা হচ্ছিল, সেভাবেই এটা চলা উচিত ছিল। কিন্তু এখন কী করার! এভাবেই চলছে।টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ওয়ানডে এবং টেস্টে এখনও সুযোগ হয়নি। এই দুই ফরম্যাটে খেলা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কী?সালমান: এখন আমি টি-টোয়েন্টি খেলছি। তবে ওয়ানডের জন্য আমার প্রস্তুতি চলছে। যখন সুযোগ আসবে আমি ওয়ানডের জন্য প্রস্তুত। যেভাবে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার চেষ্টা করেছি, চেষ্টা থাকবে ওয়ানডেতেও করার। টেস্ট ক্রিকেট অবশ্যই একটু কঠিন, তবে সেটার জন্যও আমি পরিশ্রম করছি। যে ফরম্যাটেই সুযোগ মিলবে আমি প্রস্তুত। নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখছি। সুযোগ আসলে আমি সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো পেসার উঠে আসে পাকিস্তান থেকে। এটার পেছনে কারণ কী?সালমান: আমার ধারণা এটা ন্যাচারাল। আমরা যখন বড় হই, তখন ফাস্ট বোলারদেরই দেখি। তখন যেটা দেখি, সেটাই আমাদের আদর্শতে রূপ নেয়, ওরকম কিছুই করার চেষ্টা করি। কোনো দেশে ব্যাটার বেশি থাকলে সবাই ব্যাটার হওয়ার চেষ্টা করবে, কোনো দেশে স্পিনার ভালো হলে ওই দেশের সবাই স্পিনার হতে চাইবে। পাকিস্তানের ইতিহাস ফাস্ট বোলার কেন্দ্রিক, তাই এখানে যেকোনো বাচ্চা বড় হয়ে ফাস্ট বোলার হতে চায়।ক্রিকেটে আপনার আদর্শ কে?সালমান: যখন ছোট ছিলাম, ওয়াসিম ভাইয়ের ম্যাচ দেখতাম। লাইভ তো দেখিনি, তবে হাইলাইটস দেখতাম। তার মতো হওয়া সম্ভব না। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে শাহিন আফ্রিদি এবং মিচেল স্টার্ক, ওদের আমি অনুসরন করি এবং চেষ্টা করি ওদের মতো বোলিং করতে।বাংলাদেশে আপনার পছন্দের ক্রিকেটার কে?সালমান: মুস্তাফিজ। ওর কাছ থেকে আমি স্লোয়ার শেখার চেষ্টা করব। আমারটাও খারাপ না। তবে ও যেভাবে করে, সেটা যদি রপ্ত করতে পারি, আমার জন্য অনেক ভালো হবে।বিপিএল এবং পিএসএলের মধ্যে মূল কী পার্থক্য দেখা যায় বলে মনে করেন।সালমান: বিপিএলে একটু বোলিং সহায়ক উইকেট থাকে। এখানে শুরুতে পেসাররা সুইং পায়, মিডল ওভারে স্পিনও ভালো হয়। পিএসএলে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বেশি হয়। এইটুকুই পার্থক্য। এর বাইরে দুটোই বিশ্বের সেরা লিগগুলোর একটি। আর যেভাবে দর্শকরা সমর্থন করেন, খেলে ভালো লাগে।বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে বলে মনে করেন?সালমান: এশিয়ান কন্ডিশন হবে। স্পিন হবে এবং বাংলাদেশ স্পিন কন্ডিশনে ভয়ানক দল। বাংলাদেশের কাছে ভালো স্পিনার আছে এবং তারা এই কন্ডিশনে কিভাবে খেলতে হয় জানে। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অনেক ভালো করবে।