খালেদা জিয়ার শোকে ডুকরে কাঁদছে ফেনীবাসী

বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ তার নিজ জেলা ফেনী। অভিভাবক হারানোর বেদনায় ডুকরে কাঁদছে সর্বস্তরের মানুষ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার পৈত্রিক ভিটা ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুরের মজুমদার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ফেনীর দাগনভূঞার কৃতি সন্তান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আওয়াল বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ দিন। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় আপসহীন দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের বাতিঘর বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিনি কেবল একটি দলের প্রধান ছিলেন না, তিনি ছিলেন কোটি কোটি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তার ত্যাগ, সাহসিকতা এবং অবিচল নেতৃত্ব আমাদের চিরকাল ঋণী করে রেখেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি আজ আমার একজন অভিভাবককে হারালাম। তার স্নেহ, দিকনির্দেশনা এবং আদর্শ আমার রাজনৈতিক পথচলায় সবসময় পাথেয় হয়ে থাকবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান রাব্বুল আলামিন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও কোটি কোটি নেতাকর্মীকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সয়ে নেওয়ার শক্তি দিন। আসিফ রানা নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, বেগম জিয়া আরও আগেই ইহলোক ত্যাগ করতে পারতেন, কিন্তু আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা তাকে জীবিত রেখেছিলেন যাতে তিনি নিজের জীবদ্দশায় রাজনীতির উত্থান পতন, বিশ্বাসঘাতকতা ও সত্যের পরীক্ষাগুলো নিজ চোখে দেখে যেতে পারেন। এগুলো ইতিহাসের অংশ, আর ইতিহাস দেখারও যোগ্যতা সবাই পায় না। আল্লাহ তায়ালা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেহেশত নসিব করুন এবং তার অনন্ত যাত্রা কবুল করুন। মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, উনি আলেমদের যথেষ্ট সম্মান করেছেন। ওনার জন্য মন থেকে দোয়া হবে, আল্লাহ ওনাকে জান্নাতি মেহমান বানায় নিও। সবাই একবার সুরা ফাতেহা পাঠ করেন। তিনবার সূরা ইখলাস পড়ে তিনার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কুরআন খতম করেছি। আল্লাহ মরহুমাকে মাফ করে জান্নাত দান করেন। ফেনীর সন্তান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন। কায়মানো বাক্যে মহান রবের দরবারে এ মহীয়সী নেত্রীর জান্নাত কামনা করছি।’ কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, পরম শ্রদ্ধেয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে আমি গভীর শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি আজীবন লড়েছেন এই দেশের মানুষের অধিকার আর গণতন্ত্রের জন্য। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু বা কারাগারের অন্ধকার, কোনোকিছুই তাকে টলাতে পারেনি। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হয়ে। তিনি বলেন, তার সঙ্গে রাজনীতি করার সুযোগ এবং তার স্নেহধন্য হওয়া আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটি। মহান রাব্বুল আলামিন এই মহীয়সী নারীকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার দাদা হাজী সালামত আলী, নানা জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় তার জন্ম। আদি পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়িতে। খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস শুরুর আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। ৩৭ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে মারা যান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এফএ/জেআইএম