মানুষের জন্ম যেমন সুনিশ্চিত, মৃত্যুও তেমনই এক অবধারিত সত্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত’ অর্থাৎ ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)।জীবনে চলার পথে সাফল্য, ব্যস্ততা বা অঢেল সম্পদ থাকলেও মৃত্যুর ডাক এলে সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়। ইসলাম এই ধ্রুব সত্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে এবং শিখিয়েছে বিপদে বা শোকের মুহূর্তে মুমিনের করণীয় কী। মুমিন মুসলমানের জন্য যেকোনো মৃত্যুসংবাদ বা বিপদ শুধু শোকের বিষয় নয়, বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষাও। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই সময়ে পঠিতব্য দোয়া ও তার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। শোক বা বিপদে যে দোয়া পড়তে হয় কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে বা কোনো বিপদে পড়লে মহান আল্লাহ মুমিনদের একটি বিশেষ বাক্য বা দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একে ইসলামি পরিভাষায় ‘ইস্তিরজা’ বলা হয়। দোয়াটি পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ রসুলুল্লাহ (স.) এই আয়াতের সঙ্গে একটি দুআ যুক্ত করে পড়ার শিক্ষা দিয়েছেন, যা বিপদের উত্তম প্রতিদান লাভে সহায়ক। সেটি হলো: ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’ আরও পড়ুন: জানাজার নামাজ: নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে পুণ্য দান করুন এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করুন।’ অনেকে মনে করেন, এই দোয়াটি শুধু কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই পড়তে হয়। মূলত বিষয়টি তা নয়। ইসলামি স্কলারদের মতে, ছোট-বড় যেকোনো দুঃসংবাদ, সম্পদ হানি বা বিপদেই এই দোয়া পড়া সুন্নাত। এমনকি হাত থেকে কোনো কিছু পড়ে গেলেও রসুল (সা.) ‘ইন্না লিল্লাহি...’ পড়তেন। এই দোয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো মুসলিম যখন বিপদে পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশ মতো ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ এবং উল্লিখিত দোয়াটি পড়ে, তখন আল্লাহ তাকে ওই বিপদের সাওয়াব দান করেন এবং তার হারানো বস্তুর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করেন।’ (সহিহ মুসলিম ৯১৮) উম্মে সালামা (রা.) বলেন, ‘আমার স্বামী আবু সালামা যখন মারা গেলেন, তখন আমি ভাবলাম, আবু সালামার চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? তবুও আমি রসুল (স.)-এর শেখানো দোয়াটি পড়লাম। ফলে আল্লাহ আমাকে তার বিনিময়ে (স্বামী হিসেবে) রসুলুল্লাহ (স.)-কে দান করলেন।’ সুতরাং, মৃত্যু বা যেকোনো বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং তার কাছেই উত্তম প্রতিদান চাওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য।