৪১ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য লড়ে গেছেন সবসময়। তিনি দেশ ও দেশবাসীর ব্যাপারে ছিলেন আপোসহীন। পেয়েছেন ‘গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী’র খেতাব। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এক সমাবেশে বিএনপির চেয়ারারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এই দেশ ছেড়ে, এই দেশের মানুষকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। এই দেশই আমার একমাত্র ঠিকানা’।রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময়ই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। সামান্য সমঝোতা করলে আরাম-আয়েশে থাকতে পারতেন, কারাবরণ করতে হতো না। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন সংগ্রামের পথ।১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক অভ্যুত্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। ঠিক সেই সময়ে নেতৃত্বহীন দলে পুনরুজ্জীবন ঘটাতে সামনে আসেন খালেদা জিয়া। দল সংগঠনের পাশাপাশি সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন তিনি।তার নেতৃত্বেই এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। পরের বছর নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বেগম জিয়াকেবাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে তিনি কখনোই আপস করেননি। ভয় বা লোভের কাছে মাথা নত করেননি। ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আপস না করায় তাকে কারাবরণ করতে হয়। কারাগারে নির্যাতনের শিকার হন তার দুই ছেলেও।বেগম খালেদা জিয়া এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘মইনুদ্দিন–ফখরুদ্দিন আমার সঙ্গে কথা বলেছে, আমাকে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। আমি যেতে রাজি হইনি বলে আমার সন্তানদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। আমাকে বলা হয়েছিল, আপনি না গেলে মামলা দেয়া হবে, ছেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে।’তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম, আমি দেশ ছেড়ে, দেশের মানুষকে ছেড়ে কোথাও যাব না। এই দেশই আমার একমাত্র ঠিকানা। দেশের বাইরে আমার কিছু নেই, কোনো ঠিকানাও নেই। আপনাদের ছেড়ে না যাওয়ার কারণেই আমার ছেলেদের ওপর এত নির্যাতন হয়েছে। আমাকে জেলে যেতে হয়েছে, কিন্তু জনগণকে ছেড়ে যাইনি। মইনুদ্দিন–ফখরুদ্দিনের সঙ্গে কোনো আপসও করিনি।’আরও পড়ুন: জরুরি সভায় অংশ নিতে গুলশানে তারেক রহমানবিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলেও পুনরায় কারাবরণ করতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। রায় ঘোষণার কিছুদিন আগে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। তখন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা দাবি করেছিল, তিনি আর ফিরবেন না। কিন্তু তিনি ফিরেছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঝড় নামবে জেনেও গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরে দীর্ঘ তিন বছর কারাগারে থাকতে হয় তাকে। সে সময়ও তাকে নানা প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। রাজনীতি না করলে বা দেশ ছেড়ে গেলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া কোনো অবস্থাতেই মাথানত করেননি।মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।