সাফিনাতুন জাহান সাবরিন শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম। বছরের শেষ সময় ডিসেম্বরে মানুষ একটু প্রশান্তি খোঁজে। পরিবার, প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে কোথাও ঘুরে বেড়ানোর আনন্দে মন ভরে ওঠে। কুয়াশাভেজা সকাল, নরম রোদ আর সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ায় শীতকাল যেন মনকে নতুন করে সতেজ করে তোলে। আর সেই শীতের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে চা বাগানে। শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন চা বাগান, পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে সবুজের মেলা। এমন দৃশ্য কার না ভালো লাগে? চায়ের রাজ্য বলতে সর্বপ্রথম আমাদের মাথায় আসে শ্রীমঙ্গলের কথা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলাও ছোট পরিসরে এক টুকরো চায়ের রাজ্য। এখানে আছে প্রায় ২০-২৫টি ছোট-বড় চা বাগান। পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা অঞ্চলটিকে বলা যায় চট্টগ্রামের নিজস্ব চায়ের রাজ্য। শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার সুযোগ না হলেও চট্টগ্রাম শহর থেকেই খুব সহজে ঘুরে আসা যায় মনোমুগ্ধকর চা বাগানগুলো। চট্টগ্রাম শুধু পাহাড়, সমুদ্র আর বন্দরনগরী নয়। এখানেই আছে এক টুকরো চায়ের রাজ্য। ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগান তারই প্রমাণ। প্রকৃতি, শান্ত পরিবেশ আর শীতের কুয়াশামাখা সকাল উপভোগ করতে চাইলে একদিন ঘুরে আসতেই পারেন। শীতের সকালে কুয়াশা মোড়া এই চা বাগান যে কাউকে মুগ্ধ করবে। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন, নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে চান। তাদের জন্য নেপচুন চা বাগান হতে পারে নিখুঁত গন্তব্য। শীতের সকালে ফটিকছড়ির চা বাগানে পা রাখলেই চোখে পড়ে অন্যরকম দৃশ্য। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের চা বাগান যেন স্বপ্নীল জগৎ। সবুজ চা পাতার ওপর শিশিরবিন্দু ঝিলমিল করে আর সূর্যের আলোর ঝলকানি পাতার ফাঁকে ফাঁকে খেলে যায়। কুয়াশার পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো যখন চা পাতার ওপর পড়ে; তখন চারপাশে তৈরি হয় মোহনীয় পরিবেশ। পাহাড়ের ঢালে ঢালে ছড়িয়ে থাকা চা গাছগুলো সৃষ্টি করে অনন্য সৌন্দর্য। চা বাগানে গেলে দেখা যায়, চা শ্রমিকরা ব্যস্ত হাতে চা পাতা সংগ্রহ করছেন। এই দৃশ্য দেখলেই বোঝা যায়। এক কাপ চা আমাদের হাতে পৌঁছাতে কতটা শ্রম আর যত্ন লুকিয়ে থাকে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে ছড়িয়ে থাকা চা গাছ আর প্রকৃতির নীরবতা। সব মিলিয়ে মনে হয় যেন ছবির ভেতর ঢুকে পড়েছি। চা পাতা সংগ্রহ করা শ্রমিকদের ব্যস্ততা আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, এক কাপ চায়ের পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক ঘাম আর পরিশ্রম। আরও পড়ুনএকদিনে ঘুরে আসুন কক্সবাজার পাহাড় ও সমুদ্রের খোঁজে আমরা আমরাও ঠিক করি এই শীতের সকালে চা বাগানে যাবো। তাই বেরিয়ে পড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত নেপচুন চা বাগান দেখতে। ফটিকছড়ির অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো নেপচুন চা বাগান। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে, ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নে পাহাড়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত। এই চা বাগান যেন সবুজের এক বিশাল গালিচা। চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। যেদিকে চোখ যায়, মন জুড়িয়ে যায়। এ ছাড়া এখানে আছে লেক। পাহাড়ের মাঝে ছোট ছোট লেক চা বাগানের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে। শীতকালে এখানে চা গাছে ফুল ফোটে, যা দেখতে সত্যিই অপূর্ব। প্রকৃতির এমন রূপ খুব সহজে চোখে পড়ে না। নেপচুন চা বাগানে দাঁড়িয়ে মনে হয়, আমরা যেন সত্যিই এক চায়ের রাজ্যে এসে পৌঁছেছি। যারা ব্যস্ততার কারণে শ্রীমঙ্গলে যেতে পারেন না, তাদের জন্য ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগান হতে পারে দারুণ একটি বিকল্প। চা, প্রকৃতি আর মানুষের জীবন, এই তিনের মেলবন্ধনই চা বাগান। নেপচুন চা বাগান শুধু সৌন্দর্যের জায়গা নয়, এটি দেশের অর্থনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একই সঙ্গে এটি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের বড় একটি উৎস। এখানকার চা উৎপাদন দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চা বাগানে গেলে চা পাতা সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণের নানা ধাপ দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। যারা চায়ের প্রতি ভালোবাসা রাখেন, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যেভাবে যাবেননেপচুন চা বাগানে যেতে হলে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড়ে যেতে হবে। সেখান থেকে বাসে করে ফটিকছড়ির মির্জারহাট নামতে হবে। বাস ভাড়া জনপ্রতি আনুমানিক ১০০-১২০ টাকা। এরপর মির্জারহাট থেকে ট্যাক্সি বা সিএনজি করে নেপচুন চা বাগানে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকা। লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম। এসইউ