কুড়িগ্রামের ৪ শতাধিক চরের বেশিরভাগ চরেই নেই কোনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার ন্যূনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত নদ-নদী অববাহিকায় বসবাসকারীদের সন্তানরা। শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন কৃষি বা গৃহস্থলি কাজে।স্বাধীনতার পর থেকে ভাঙনের কারণে চর পরিবর্তনের ফলে এ অবস্থা চলতে থাকলেও আপাতত এসব চরে শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সরকারি পরিকল্পনা নেই বলে জানায় শিক্ষা বিভাগ।সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের চর কালির আলগায় বসবাসকারী প্রায় ৪শ’ পরিবারের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।শুধু কালির আরগা নয়, একই চিত্র জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার বালাডোবা, মুসারচর, আটাশির চর, মাঝিয়ালির চর, মসলার চরসহ ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের অববাহিকার বেশির ভাগ চরাঞ্চলের।আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ৯ ভারতীয়কে পুশইন বিএসএফের, একই পথে ফেরতের দাবি বিজিবিরখোঁজ নিয়ে জানা, গেছে, কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধররা, তিস্তা ও দুদকুমারের অববাহিকার চার শতাধিক চরের মধ্যে আড়াইশ চরে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব চরের শিশুদের নদ-নদী পাড়ি দিয়ে পাশের চরে যাওয়াও দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া ছেলে মেয়েদের স্কুলে পৌঁছানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হওয়ায় তেমন আগ্রহ নেই অভিভাবকদেরও। তাই শিক্ষার আলো ছাড়াই বেড়ে উঠতে হচ্ছে এই চরের শিশুদের।স্থানীয়রা জানায়, এসব চরের দু’একজন বাসিন্দা তাদের শিশু সন্তানদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। কিন্তু বাকি শিশুদের ভাগ্যে জুটছে না প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগটুকুও।সদর উপজেলার কালির আলগা চরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে জেগে ওঠা কালির আলগার চরে প্রায় ৪শ’ পরিবার বসবাস করছে। কিন্তু এই চরে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। দূরবর্তী চরে বা উঁচু এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে সন্তানদের নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। ফলে আমাদের এই চরে ৫ শতাধিক শিশু শিক্ষা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। আমরা চাই এই চরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চাই।’উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার আরেক চর মুসার চরের বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, ‘আমাদের চরে চার শতাধিক পরিবার রয়েছে। কিন্তু এখানে কোনো বিদ্যালয় নেই। আমরা চাই একটি বিদ্যালয় দেয়া হলে আমাদের শিশুরা অন্তত: প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারতো।’আরও পড়ুন: বুধবারের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা স্থগিতকুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘একমাত্র নদ-নদীর ভাঙনের কারণে জেলার চরাঞ্চলগুলোতে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যস্থায শিক্ষা ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারেরও তেমন কোনো পরিকল্পণা নেই। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি বার বার অবহিত করে আসছি। যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তো আমরা সহযোগিতা করতে পারব।’সরকারি তথ্য মতে, কুড়িগ্রাম জেলার ৪ শতাধিক চরাঞ্চলে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।