সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গত পাঁচ বছরের জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে হাসপাতালের শয্যায়। এই সময়কালে তিনি মোট ৪৮৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কখনো কারাবন্দি অবস্থায়, আবার কখনো মুক্ত থেকেও গুরুতর অসুস্থতার কারণে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এসব রোগের জটিলতা আরও বেড়ে গেলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে গেছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে তাকে কমপক্ষে আটবার ভর্তি হতে হয়েছে। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে লন্ডনেও চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বেগম খালেদা জিয়ার দেশ-বিদেশে চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, গত পাঁচ বছরে বেগম খালেদা জিয়া মোট ৪৮৪ দিন হাসপাতালের বিছানায় কাটিয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। রায় ঘোষণার পরই তাকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে খালেদা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ও আপিলে সাজা বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ২৫ মাস কারাভোগের পর, করোনা মহামারির মধ্যে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তিনি বাসায় ফেরেন। দলীয় ও পারিবারিক সূত্র অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালে কারাবন্দি অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন একাধিকবার বি এস এম এম ইউ-তে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। ২০২২ সালে মুক্ত অবস্থায়ও তার শারীরিক অবনতি হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থাকতে হয় তাকে। ২০২৩ সালে লিভার ও কিডনি জটিলতার কারণে একাধিক দফায় হাসপাতাল ভর্তি হয়। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে বয়স ও জটিল রোগের কারণে হাসপাতালে থাকার সময় আরও দীর্ঘ হয়। সব মিলিয়ে, গত পাঁচ বছরে তার হাসপাতালে অবস্থান ৪৮৪ দিন, যা প্রায় দেড় বছরের সমান। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি তিনি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরদিন সেখানে দি লন্ডন ক্লিনিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। প্রায় ১৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতাল ছাড়েন। এরপর হাসপাতালে ভর্তি না থেকে ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা চালিয়ে যান। প্রায় চার মাস পর, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরে আসেন। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অবশ্যই দায় রয়েছে বলে মনে করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘একটা প্রহসনমূলক রায়ে তাকে জেলখানায় পাঠিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেটা যে সম্পূর্ণ সাজানো রায় ছিল তা সর্বোচ্চ আদালতের আপিল ও রিভিউয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।’ মঙ্গলবার ( ৩০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এমইউ/এমআইএইচএস/এমএস