চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনেন তিনি। দীর্ঘদিনের মুক্ত বাণিজ্য কাঠামো ভেঙে, শুল্ককে কেন্দ্র করে নতুন নীতি গ্রহণ করে ওয়াশিংটন।ট্রাম্পের এই নীতির প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক বাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর এবং বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথে আসে পরিবর্তন। কয়েক দশকের মুক্ত বাণিজ্য নীতি ভেঙে, প্রায় পুরো বিশ্বের ওপর শুল্কের দেয়াল তুলে দেন তিনি। উদ্দেশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং দেশীয় উৎপাদন ফিরিয়ে আনা। ইয়েল বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইফেকটিভ ট্যারিফ রেট প্রায় ১৭ শতাংশে পৌঁছায়, যা ১৯৩৫ সালের পর সর্বোচ্চ। ২৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক থেকে আদায় হয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বেড়েছে পণ্যের দাম আর জীবনযাত্রার খরচ। বছরের শুরুতেই ট্রাম্প তার শুল্ক যুদ্ধের লক্ষ্য বানান যুক্তরাষ্ট্রের তিন বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার - কানাডা, মেক্সিকো ও চীনকে। একাধিক শুল্ক ঘোষণা ও সাময়িক স্থগিতের কারণে ব্যবসায়ীরা পড়েন অনিশ্চয়তায়। একই সময়ে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়, যা শিল্পখাতে উত্তেজনা তৈরি করে। এপ্রিল মাসে শুল্ক যুদ্ধ নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। আরও পড়ুন: ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ধস, নিজ দলেও কমছে সমর্থন! ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তথাকথিত "লিবারেশন ডে" ট্যারিফ, যেখানে প্রায় সব দেশের ওপর একযোগে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর প্রভাবে শেয়ারবাজারে বড় ধস নামে। যদিও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শুল্ক স্থগিতের ঘোষণায় বাজার আবার ঘুরে দাঁড়ায়, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি তৈরি করে। চীনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি শুল্ক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বেড়ে যায় ১৪৫ শতাংশে, আর চীনের পাল্টা শুল্ক দাঁড়ায় ১২৫ শতাংশে। মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ‘ট্রেড ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তির দাবি করে। এ সময় চীন, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের নাম উঠে আসে। তবে একই সময়ে ব্রাজিল ও ভারতের সঙ্গে শুল্ক সংঘাত আরও বাড়ে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বৈধতা নিয়ে ফেডারেল কোর্টে মামলা জোরালো হয়। আরও পড়ুন: ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের (ভিডিও) আগস্টে কার্যকর হয় ৬০টিরও বেশি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নতুন শুল্ক। কানাডার ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ, আর ব্রাজিল ও ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়। বিশ্বব্যাপী আমদানিকৃত তামার ওপরও আরোপ হয় ৫০ শতাংশ শুল্ক। একইসঙ্গে বাতিল করা হয় 'ডি মিনিমিস' নিয়ম, এতে কম মূল্যের পণ্যের ওপরও শুল্ক দিতে হয় আমদানিকারকদের। ডিসেম্বরে শুল্ক ইস্যু গড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে। শুনানিতে বিচারপতিরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এদিকে ট্রাম্প নতুন সেক্টরভিত্তিক শুল্কের ঘোষণা দিলেও, মূল্যস্ফীতির চাপে গরুর মাংস ও ফলমূলসহ কিছু পণ্যে শুল্ক কমানো হয়। এই সময় ট্রাম্প শুল্ক রাজস্ব থেকে ২ হাজার ডলারের ডিভিডেন্ড চেক দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও, কোনো স্পষ্ট রূপরেখা দেননি। বছরজুড়ে কখনো শুল্ক ঘোষণা, কখনো স্থগিত, আবার নতুন করে আরোপ। এই নীতিগত অনিশ্চয়তা ব্যবসা ও ভোক্তাদের মধ্যে তৈরি করেছে বিভ্রান্তি। ২০২৫ সাল শেষ হলেও ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের আইনি ও অর্থনৈতিক লড়াই এখনো চলমান। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে এই শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছরগুলোতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে এই নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।