মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। বাৎসরিক আয় থেকে শুরু করে স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পত্তি বেড়েছে তার। একইসঙ্গে ৭ বছর আগে শূন্যের কোটায় থাকা আরিফের স্ত্রী সামা হক চৌধুরীও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার সঙ্গে ২০১৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে আরিফ ও তার স্ত্রীর এই সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বশিক্ষিত আরিফের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও একটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। আরিফ ও তার স্ত্রীর পেশা ব্যবসা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে আরিফুল হক চৌধুরীর বাৎসরিক আয় ছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ২০২৫ সালে এসে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৮৩ হাজার ২৩৬ টাকায়। অর্থাৎ আয় বেড়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রীর কোনো আয়ের উৎস ছিল না। ২০২৫ সালের আরিফের স্ত্রীর বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৯ টাকা। আরিফের স্ত্রীর আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসার কথা বলা হয়েছে। তবে বছরে ২৪ লাখ টাকা আয়ের উৎস হলেও সামা হক চৌধুরীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকারও বেশি। আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সামা হক চৌধুরীর বাৎসরিক আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে কৃষিখাতে ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ টাকা, অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক খাত থেকে আয় ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা ও এই খাতে তার স্ত্রীর আয় ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪২৪ টাকা, ব্যবসা থেকে আরিফের আয় ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৯ টাকা ও তার স্ত্রীর আয় ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, শেয়ার থেকে আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৪ হাজার টাকা ও স্ত্রীর আয় ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরিফের আয় ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪০৩ টাকা। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আরিফের বর্তমান অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৮৪ টাকার। এই সম্পত্তির অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৪ টাকা। ২০১৮ সালে আরিফুল হক চৌধুরীর নিজের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ১ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৩ টাকার। এই ৭ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে ২ কোটিরও বেশি টাকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আরিফের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। যা অর্জনকালীন সময়ে ছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ৭৮৪ টাকা। অথচ ২০১৮ সালে আরিফের স্ত্রীর নামে কোনো অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না। হলফনামা পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে- আরিফুল হক চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রার মধ্যে ৫ হাজার ৯১৮ ডলার ও ৬ হাজার ৮৩১ পাউন্ড, ব্যাংকে জমা ১ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৯ টাকা, বন্ড-শেয়ার ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৫ টাকা, পোস্টাল-সঞ্চয় ৫৩ হাজার ৫ লাখ ২১৫ টাকা, মোটরগাড়ি ১ কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৮ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র ৩ লাখ টাকা। আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী সামা হক চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রার ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮১ টাকা, পোস্টাল-সঞ্চয় ৫৮ লাখ টাকা, মোটরগাড়ি ১২ লাখ টাকা, ২৭ ভরি স্বর্ণ, আসবাবপত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। ২০১৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামায় স্থাবর সম্পদ থাকলেও সেটির হিসাব টাকায় উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু ৭ বছর পরে এসে সেই সম্পদের হিসাব টাকায় উল্লেখ করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। নিজের দেওয়া তথ্যমতে বর্তমানে তার স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮২ টাকার। যার অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ছিল ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮২ টাকা। ২০১৮ সালে আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। বর্তমানে আরিফের স্ত্রী সামা হক চৌধুরীর স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৬ কোটি ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ২০৭ টাকা। এসব সম্পত্তির অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ছিল ৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৩ হাজার ২০৭ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরীর নামে ২০ লাখ ১৫ হাজার ২৮২ টাকার কৃষি জমি, ৮৯ লাখ ৯ হাজার ৩৬৪ টাকার, বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট ৩২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩০ টাকা, চা বাগান ও খামার ১ কোটি ২৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, অন্যান্য ৪ কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৬ টাকা। আরিফের স্ত্রী শামা হক চৌধুরীর নামে অকৃষি জমি রয়েছে ১৫ লাখ ১২ হাজার টাকা, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ২০৭ টাকার। আহমেদ জামিল/এফএ/এএসএম