যে নামটি ফেনীর পরিচয়ের সঙ্গে মিশে ছিল ইতিহাস ও অহংকার হয়ে, সেই বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে স্তব্ধ জনপদ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই ‘অভিভাবক’ হারানোর বেদনা নিয়ে ফুলগাজীর দক্ষিণ শ্রীপুরের পৈত্রিক বাড়ি থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন স্থানে কোরআন খতম, দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে। অন্যদিকে তাদের প্রিয় নেত্রীর শেষ বিদায়ে শামিল হতে বিকেল থেকেই ফেনী থেকে ঢাকামুখী হাজারো নেতাকর্মীর অশ্রুসিক্ত যাত্রা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম হোসেন মজুমদার বলেন, পারিবারিক পরিবেশে খালেদা জিয়া ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল ও বিনয়ী। বাবার বাড়িতে এলে তিনি পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন, আর ছোটদের প্রতি দেখাতেন অকৃত্রিম ভালোবাসা ও মমতা। সবার খোঁজখবর নেওয়া, আপন করে কাছে টেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পেত তার আন্তরিকতা। খন্দকার জামাল উদ্দিন নামে খালেদা জিয়ার আরেক প্রতিবেশী বলেন, মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরপরই আমরা মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় কোরআন খতমের আয়োজন করেছি। তিনি শুধু একজন দেশনেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানুষের আপনজন। এমন উদার, দৃঢ়চেতা নেতা আর জন্মাবে কিনা আল্লাহই জানেন। ফুলগাজীর মানুষ তাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো। আমাদের গর্বের সেই জায়গায় অপূরনীয় এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ফেনী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন খন্দকার বলেন, বেগম জিয়ার মৃত্যুতে আমাদের দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ছাত্রদলের রাজনীতির শুরু থেকেই ‘ফেনীর মেয়ে’ হিসেবে আমরা উনাকে পেয়েছি, সবসময় আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি একজন আপসহীন নেত্রী ছিলেন। গত ১৭ বছর রাজনীতিতে আমরা নানা জুলুমের শিকার হয়েছি, তবুও তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। আমাদের প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছি। ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ফেনী-১ আসন থেকে বেগম খালেদা জিয়া বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো এক শীতের গভীর রাতে ফেনী সার্কিট হাউস থেকে নির্বাচনি এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কম্বল নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও সবসময় নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষের বিষয়ে সচেষ্ট ছিলেন। তার মৃত্যুতে সারাদেশের ন্যায় ফেনীর রাজনৈতিক অঙ্গনেও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই জেলাজুড়ে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি মাইক্রো ও বাসে হাজারো নেতাকর্মী জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন, অনেকেই ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, পরম শ্রদ্ধেয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে গভীর শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি আজীবন লড়েছেন এই দেশের মানুষের অধিকার আর গণতন্ত্রের জন্য। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু বা কারাগারের অন্ধকার, কোনোকিছুই তাকে টলাতে পারেনি। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হয়ে। তার সঙ্গে রাজনীতি করার সুযোগ ও তার স্নেহধন্য হওয়া আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। সর্বশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনের প্রার্থী হিসেবে গত সোমবার খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন নেতাকর্মীরা। আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমএন/এএসএম