মুসলমান ব্যক্তি মারা গেলে তার ক্ষমার জন্য মরদেহ সামনে নিয়ে বিশেষ নিয়মে যে দোয়া করা হয়, তার নাম জানাজার নামাজ। ‘জানাজা’ শব্দের অর্থ মরদেহ।জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কেফায়া। ফরজে কেফায়া হলো দু-একজন আদায় করলে মহল্লার সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। আর কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হয়। জানাজার নামাজের আরবি ও বাংলা নিয়ত জানাজার নামাজের নিয়ত কেউ যদি আরবিতে পারে ভালো। আরবিতে বলতে না পারলেও সমস্যা নেই। বাংলাতে বললেও হয়ে যাবে। আরবি নিয়ত এভাবে বলতে পারেন, জানাজার আরবি নিয়ত نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবা আ তাকবিরাতি সালাতিল জানাজাতি ফারজুল কেফায়াতি ওয়াসসানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াসসালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লি হাযাল মাইয়্যিতি এক্কতিদায়িতু বিহাযাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতে আল্লাহু আকবার।’ এখানে নিয়তে ‘লি হাযাল মাইয়্যিতি’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লি হাযিহিল মাইয়্যিতি’ বলতে হবে। জানাজার বাংলা নিয়ত জানাজার নামাজের আরবিতে নিয়ত করা জরুরি না। বাংলাতেও নিয়ত করতে পারবেন। ‘আমি চার তাকবিরের সঙ্গে ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে এ ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি আল্লাহু আকবার।’ জানাজার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি জানাজার নামাজ চার তাকবিরে দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়। প্রথম তাকবিরে হাত উঠানোর পর অন্য তিন তাকবিরের সময় হাত উঠাতে হবে না। ‘আল্লাহু আকবার’ প্রথম তাকবির বলে হাত তুলে অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে। আরবিতে সানা: سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ উচ্চারণ: ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’ সানা পড়ার পর দ্বিতীয় তাকবির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আর হাত উঠাবে না। দরুদ শরিফ পড়বে। সাধারন নামাজে তাশাহুদের পর যে দরুদ পড়া হয়, সেটা পড়বে। দরুদ শরিফ: للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।’ দরুদ শরিফ পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তৃতীয় তাকবির দিবে। এ ক্ষেত্রেও হাত উঠাবে না। এরপর জানাজার দোয়া পড়তে হবে। জানাজার নামাজের দোয়া اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও সগিরিনা ও কাবিরিনা ও জাকারিনা ও উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান।’ নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফাআ।’ নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আল হা লানা ফারতাও ওয়াজ আল হা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আল হা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।’ এরপর আল্লাহু আকবার বলে চতুর্থ তাকবির দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।