চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিল ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় পানির অভাবে ৫০০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফেটে চৌচির হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠের উর্বর জমি। পানির অভাবে মারা যাচ্ছে ধানের চারা।সরেজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারতীয় সীমান্তবর্তী ললিহা বিলের গেলে চারদিকে থাকা প্রায় ৫০০ বিঘা জমির এমন চিত্রই চোখে পড়ে।জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তবর্তী ললিহা বিলের জমি প্রস্তুতের প্রাথমিক কাজ শেষ হলেও পানি না পাওয়ায় শুরু হচ্ছে না বোরো ধান আবাদের কাজ। পানির অভাবে এসব কৃষকরা বোরো আবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।কৃষকরা জানান, যুগ যুগ ধরে বিলের পানি আটকে আশপাশের জমি চাষাবাদ করেন তারা। কিন্তু চলতি বর্ষাতেও কৃষকরা বাধা দিলে তা ভেঙে দিয়ে পানি ছেড়ে দেন বিলের ইজারাদার। এতে এখন পানিশূন্য অবস্থায় রয়েছে ললিহা বিল। ফলে আশপাশে থাকা এসব জমি এখন অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে৷ বিল ছাড়া পানির অন্য কোনো উৎস না থাকায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ এই ফসলের মাঠ। ধান চাষ না করতে পারলে পথে বসবে কয়েকশ কৃষক।আরও পড়ুন: নীলফামারীতে জমি ফেটে চৌচির, পানি উঠছে না নলকূপেওধানের চারা ও জমি প্রস্তুত করেও জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, বিলের সবগুলো পানি জোরপূর্বক ছেড়ে দেয়ায় আশপাশে থাকা এসব জমি এখন অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে৷ বিল ছাড়া পানির অন্য কোনো উৎস না থাকায় এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। যুগ যুগ ধরে চলা নিয়ম ভেঙে ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় এমন সংকটে পড়েছেন কৃষকরা।কৃষক আব্দুল আওয়াল সময় সংবাদকে বলেন, বিলের চারিদিকে থাকা জমিগুলো পৈত্রিক। আমার দাদা এরপর বাবা এগুলো চাষাবাদ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬-১৭ বছর ধরে আমি চাষাবাদ করে জীবনধারণ করছি। প্রত্যেক বছরে বর্ষা শেষ হলেই বিলে আটকে রাখা পানিতে চাষাবাদ করি। কিন্তু এ বছর বর্ষা শেষ হতে না হতেই জোরপূর্বক পানি দেয় বিল ইজারাদার। এতেই চরমভাবে ভোগান্তি ও হয়রানির মধ্যে পড়েছি। এখন ধানের চারা ও ধান চাষাবাদ করতে পানি পাচ্ছি না।চাষি আব্দুল কালাম জানান, এই বিলের পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করে সংসার চলে। কিন্তু ইজারাদার আমাদের পথে বসিয়েছেন। বিলের চারপাশে থাকা ৪০০-৫০০ বিঘা জমি চাষাবাদ না করতে পেরে এখন পথে বসার উপক্রম কয়েকশ কৃষকের। রাতের অন্ধকারে বিলের পানি ছেড়ে দিয়ে কৃষকদের সঙ্গে চরম অন্যায় করেছেন তারা। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।আরও পড়ুন: বরেন্দ্র অঞ্চলে মাঠের পর মাঠ কৃষি জমি ফেটে চৌচিরএ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও সুরাহা হয়নি বলে দাবি কৃষক মফিজুল ইসলামের। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদার ধারাবাহিকতায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিলের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করি। আশপাশে আরও বিল রয়েছে, সেখানেও একই উপায়ে চাষাবাদ হয়। কিন্তু চলতি বোরো আবাদ নিয়ে আমরা এখনও অনিশ্চয়তায়। ধানের চারা মরে যাচ্ছে পানি না পেয়ে। জমি প্রস্তুতের প্রাথমিক কাজ করে রাখলেও পানি কারণে চাষাবাদ করতে পারছি না।’এ নিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বিল ইজারাদারদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ দিকে, বিলে বোরো আবাদ না হলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাকলাইন হোসেন বলেন, ‘রাধানগর ইউনিয়নে কয়েকটি এমন বিশাল বিল রয়েছে। এসব বিলের পানি থেকেই আশপাশে বিপুল পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ হয়। কিন্তু এ বছর পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি।’আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সেচ সংকট: ১০ হাজার হেক্টর জমি পতিত, ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪ হাজার কৃষকতিনি আরও জানান, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি বিকল্প যেকোনো উপায়ে পানির ব্যবস্থা করতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র সঙ্গে আলোচনা করা হবে।তিনি আরও বলেন, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ হিসেবে পরিচিত এসব এলাকায় ধান চাষাবাদ না হলে একদিকে যেমন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেও জানান তিনি।এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির মুন্সি সময় সংবাদকে বলেন, ‘কৃষকদের এই সমস্যার বিষয়ে কিছুদিন আগে মৌখিক অভিযোগ ও পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’প্রসঙ্গত, ললিহা বিলে চাষাবাদে অনিশ্চয়তা থাকা ৫০০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন দুই শতাধিক কৃষক। এসব জমি থেকে অন্তত ১২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।