বাংলাদেশের রাজনীতির এক দীর্ঘ, ঘটনাবহুল ও আপসহীন অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত পুরো দেশ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মতভেদ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে তার বিদায় সংবাদমাধ্যমগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে বিশেষ গুরুত্ব, আবেগ ও ইতিহাসের ভার নিয়ে। জাতীয় দৈনিকগুলো খালেদা জিয়ার জীবন ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে তুলে ধরেছে নানা মাত্রায়— কোথাও আপসহীন রাষ্ট্রনায়ক, কোথাও সংগ্রামের প্রতীক, কোথাও এক অধ্যায়ের সমাপ্তি।দৈনিক নয়া দিগন্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যানার হেডলাইন করেছে। তাদের প্রধান সংবাদ সংবাদের শিরোনাম- ‘‘আপসহীন রাষ্ট্রনায়কের বিদায়’’।পত্রিকাটি বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুকে দেখেছে একজন “রাষ্ট্রনায়ক”-এর বিদায় হিসেবে। প্রতিবেদনে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে আপসহীন, চিরসংগ্রামী ও খাঁটি দেশপ্রেমিক নেত্রী হিসেবে। গৃহবধূ থেকে রাজনীতির শীর্ষে ওঠা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব, দীর্ঘ ৪১ বছর বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়া— সবকিছুই এসেছে ধারাবাহিকভাবে।প্রতিবেদনে তার অসুস্থতা, হাসপাতালে চিকিৎসা, পরিবারের উপস্থিতি, জানাজা ও দাফনের রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতি যেমন আছে, তেমনি আছে গ্রেফতার, কারাবাস, দেশ না ছাড়ার দৃঢ় অবস্থান এবং “বিদেশে আমার কোনো ঠিকানা নেই”— এই রাজনৈতিক ঘোষণার পুনরুল্লেখ।দৈনিক সমকাল ডিসপ্লে কাভার করেছে। যার শিরোনাম- ‘‘আপসহীন অভিযাত্রার সমাপ্তি’’। ১৯৮২ সালে তোলা নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্র ব্যবহার করে স্মৃতি ও আবেগকে সামনে এনেছে সমকাল। এখানে রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সময়, চরিত্র ও ইতিহাসের অনুভব। লেখা হয়েছে- ব্যক্তিগত বিয়োগগাথা পেছনে ফেলে সমষ্টির মাঝে। সমষ্টির শোকগাথা হয়ে অপার্থিব জগতে। মাঝখানে ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবন। খালেদা জিয়া। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম দিয়ে শুরু। ফ্যাসিবাদ-মুক্তির পর শেষ। এই পুরো সময় রাজনীতির আপসহীন মুখ তিনি।দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ-যাত্রার অবসান হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তার নামাজে জানাজা আজ বুধবার বেলা ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।দৈনিক কালের কণ্ঠ স্পেশাল মলাট স্টোরি করেছে। যার শিরোনাম- ‘‘অনন্তে অম্লান আপসহীন’’। স্টোরিতে খালেদা জিয়াকে উপস্থাপন করা হয়েছে সময়ের ঊর্ধ্বে থাকা এক রাজনৈতিক চরিত্র হিসেবে। গৃহিণী থেকে কঠোর নীতি ও মূল্যবোধে গড়ে ওঠা রাজনীতিবিদ— এই রূপান্তরকে তারা গুরুত্ব দিয়েছে।প্রতিবেদনে তার ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আপসহীন অবস্থানকে আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। মৃত্যুকে “অনন্তযাত্রা” হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে— তিনি চলে গেলেও তার জীবনদর্শন ও আদর্শ অম্লান থাকবে।দৈনিক ইত্তেফাকও বিশেষ মলাট করেছে। পুরো পাতাজুড়ে বেগম জিয়ার ছবি ছেপে লিখেছে- ‘‘অনন্তলোকে অনন্তযাত্রা’’।আর মূল পত্রিকার প্রধান শিরোনাম করেছে- ‘‘চলে গেলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া’’।ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুকে জাতির জন্য এক গভীর শোক ও ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সমাপ্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ৮০ বছর বয়সে দীর্ঘ অসুস্থতার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাধারণ গৃহবধূ থেকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, কারাবাস, অসুস্থতা ও আপসহীন রাজনৈতিক সংগ্রাম— তার দীর্ঘ জীবনের সব অধ্যায় প্রতিবেদনে গুরুত্ব পেয়েছে। খালেদা জিয়াকে ইত্তেফাক অভিহিত করেছে ‘দেশনেত্রী’ ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে, যার বিদায়ে জাতি এক অপূরণীয় শূন্যতার মুখে দাঁড়িয়েছে।প্রথম আলো বিশেষ মলাটের পাশাপাশি ৮ কলাম ব্যানার হেডলাইন করেছে। শিরোনাম করেছে- ‘‘গৌরময় বিদায়’’। প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বিদায়কে দেখানো হয়েছে একটি গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হিসেবে। গৃহবধূ থেকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা, গণতন্ত্রের সংগ্রাম, কারাবাস, অসুস্থতা এবং শেষ জীবনের নিঃসঙ্গতা— সবকিছুই এসেছে মানবিক ও ধারাবাহিক বর্ণনায়।তার নিজের বক্তব্য— “এই দেশ, এই দেশের মানুষই আমার সবকিছু”-কে প্রতিবেদনের কেন্দ্রীয় ভাবনায় রাখা হয়েছে। পরিবার, দল, রাষ্ট্র এবং সাধারণ মানুষের শোককে একসূত্রে গেঁথে প্রথম আলো একটি ভারসাম্যপূর্ণ কিন্তু আবেগঘন কাভারেজ দিয়েছে।দৈনিক আমার দেশ স্কাই হেডলাইন করেছে। পত্রিকাটির নামের উপরে খালেদা জিয়ার সংবাদকে স্থান দেয়া হয়েছে। শিরোনাম করা হয়েছে- ‘‘চলে গেলেন রাজনীতির ধ্রুবতারা’’।এতে খালেদা জিয়াকে তুলনা করা হয়েছে রাজনীতির আকাশের “ধ্রুবতারা”-র সঙ্গে— যিনি চার দশক ধরে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তার মৃত্যুকে দেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় শূন্যতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, জানাজায় আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ এবং জনস্রোতের চিত্র তুলে ধরে পত্রিকাটি দেখিয়েছে— তার প্রভাব শুধু দলীয় রাজনীতিতে নয়, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরেও বিস্তৃত।