বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজধানী ঢাকায় থার্টি-ফার্স্ট নাইট কেন্দ্রিক সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ রয়েছে। এরপরও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে থেমে নেই এসবের ব্যবহার। পুলিশের পদক্ষেপে বন্ধ হয়েছে প্রকাশ্যে আতশবাজির বিক্রি। তবে একটু খোঁজ নিলেই গলিতে মিলছে আতশবাজি। জানা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার এলাকার গলির দোকানগুলোতে এখন আর সরাসরি আতশবাজি মেলে না। নানান বিধিনিষেধের কারণে দোকানিরা আতশবাজি রাখেন না। তবে হঠাৎ করেই গলির মধ্য থেকে উদয় হন আতশবাজি বিক্রেতারা। যাদের বেশিরভাগের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি গলির মাথায় ও দোকানের কোণে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন তরুণ ও কিশোর। কেউ আতশবাজি কিনতে এসে একটু খোঁজ-খবর নিলেই গলি ও দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণরা তাদের ডেকে গলির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে আতশবাজি বিক্রি। শাঁখারীবাজারে আতশবাজির দোকানকেন্দ্রিক ভিড়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এক ক্রেতা বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই মার্কেটে মানুষের ভিড় লেগে ছিল। অমুক দোকানে আতশবাজি পাওয়া যায়- এমন খবর ছড়ালেই সেখানে মানুষ ভিড় জমায়। একপর্যায়ে দোকানিরাও চাপ সামলাতে না পেরে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানুষ আতশবাজি ও ফানুস কিনতে এতটাই আগ্রহী যে দোকানিরাও এই সুযোগ কাজে লাগান। এদিকে, সাকরাইন উৎসব সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাঁখারীবাজারের ব্যবসায়ীরা। এই এলাকার সরু গলিগুলোতে শতাধিক দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উৎসবের সামগ্রী। রঙ-বেরঙের কাগজ দিয়ে তৈরি ঘুড়িতে ভরে গেছে দোকানগুলো। তবে ফানুস বা আতশবাজি আছে কি না জানতে চাইলে প্রথমে স্বীকার করতে চান না অধিকাংশ দোকানি। আরও পড়ুনঢাকায় আতশবাজি-ফানুস-ডিজে পার্টি নিষিদ্ধআতশবাজির শব্দে আতঙ্কিত নীড়হারা পাখিরাথার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির শব্দে কাঁপছিল উমায়ের, পরদিনই মৃত্যু বেশ কয়েকটি দোকানে ফানুসের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘সামনে দেখেন’ কিংবা ‘কয়েক দিন পরে আইসেন’ বলে এড়িয়ে যান তারা। অনিল নামের এক দোকানি প্রথমে রাজি না হলেও ‘অনেক পিস নেবো’ বলার পর জানান, দাম একটু বেশি পড়বে। তবে ফানুসের দেখা মিললেও কোনো দোকানেই সরাসরি জিজ্ঞেস করে আতশবাজি পাওয়া যায়নি। ক্রেতাবেশে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে আতশবাজি আছে কি না জানতে চাইলে দোকানিরা বলেন, ‘বাজি কখনো দোকানে আইসা চাইলে পাইবেন না।’ তাহলে কীভাবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনে হাঁটতে থাকেন, দোকানের আশপাশে গলির মাথায় পোলাপাইন দেখবেন। ওদের কাছে চাইলেই পাইবেন।’ পরে ফানুসের দাম জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতি পিস ৫০ টাকা। ওই দোকানির সঙ্গে কথা শেষ না হতেই ১৬-১৭ বছর বয়সী এক কিশোর এগিয়ে এসে জানতে চায়, ‘ভাই কী লাগবো?’ তাকে কিছু বলা যাবে না জানালে সে বলে, ‘আপনি কী খুঁজছেন তা জেনেই আমি আসছি।’ এরপর ‘সাইডে আহেন’ বলে একটি গলির ভেতরে ডেকে নেয় সে। সেখানে চার-পাঁচটি দোকানের ভেতরে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আতশবাজির দরদাম করতে থাকে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দামের আতশবাজি তার কাছে আছে বলে জানায়। রাস্তায় যদি পুলিশ ধরে? এমন প্রশ্নে সে জানায়, ‘এমনভাবে প্যাকেট কইরা দিমু যে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় নিতে পারবেন।’ দোকানে কেন আতশবাজি বিক্রি হয় না এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ‘ডিবি আইসা জব্দ করে।’ ফানুসের বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘আগুন ধরার পর ফানুসও নিষিদ্ধ।’ তার সঙ্গে কথা বলার সময় আশপাশ থেকে একই বয়সী আরও তিন-চারজন বালক এসে জড়ো হয়। ওই গলির সঙ্গে সংযোগ থাকা আরও কয়েকটি গলির মাথা ও আশপাশের দোকানের পাশে একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আরও বেশ কয়েকজন তরুণ ও কিশোরকে। টিএইচকিউ/কেএসআর/জেআইএম