কালো পতাকায় স্তব্ধ ফেনী: 'অভিভাবক' হারানোর শোকে মুহ্যমান পিতৃভূমি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের কালো ছায়ায় ঢাকা পড়েছে তার পৈত্রিক ভূমি ফেনী। পুরো জেলা এখন কালো পতাকায় ছেয়ে গেছে। ইতিহাসে এর আগে জেলায় কখনো এত বিপুল সংখ্যক কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। দলীয় নেতাকর্মী তো বটেই, দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে তাদের প্রিয় নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করছেন।মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই জেলার প্রতিটি সড়ক ও বাড়িতে কালো পতাকা উড়তে দেখা গেছে। পৈত্রিক নিবাস ফুলগাজীর দক্ষিণ শ্রীপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কোরআন খতম, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। 'ফেনীর মেয়ে' ও 'অহংকার' হিসেবে পরিচিত এই নেত্রীর মৃত্যুতে গোটা জনপদ এখন বিষণ্ণ। প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়েছেন।ফেনী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন খন্দকার তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, 'বেগম জিয়ার মৃত্যুতে আমাদের দুঃখ প্রকাশের ভাষা নেই। ছাত্রদলের শুরু থেকেই 'ফেনীর মেয়ে' হিসেবে উনাকে আমরা অভিভাবক হিসেবে পেয়েছি। গত ১৭ বছরের জুলুমের মধ্যেও তিনি ছিলেন আমাদের প্রধান অনুপ্রেরণা। তিনি ছিলেন এক আপসহীন নেত্রী।'দীর্ঘদিন যে নামটি ফেনীর পরিচয়ের সঙ্গে মিশে ছিল, সেই অভিভাবককে হারিয়ে আজ যেন শোকের সাগরে ভাসছে এই সীমান্ত জেলা।ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে অবস্থিত বেগম খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস ‘মজুমদার বাড়ি’ এখন কেবলই স্মৃতির এক বিশাল ভাণ্ডার। বাড়ির প্রবেশপথে দক্ষিণ শ্রীপুর দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল নিমগাছটি আজও তার আগমনের সাক্ষ্য দেয়; যা তিনি ২০০৮ সালে নিজ হাতে রোপণ করেছিলেন। এই বাড়ির প্রতিটি কোণায় জড়িয়ে আছে তার শৈশব ও পরবর্তী জীবনের অসংখ্য স্মৃতি। ঘরের ভেতরে আজও সযত্নে সংরক্ষিত আছে তাঁর ব্যবহৃত সাধারণ সেই বসার চেয়ার, বিশ্রাম নেওয়ার ছোট খাট আর খাবারের টেবিলটি। স্বজনরা জানান, শত ব্যস্ততার মাঝেও যখনই তিনি এই বাড়িতে আসতেন, আভিজাত্য ভুলে গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতেন।আরও পড়ুন: গোটা রাজধানী যেন পরিণত হয়েছিল খালেদা জিয়ার জানাজার ‌‘জায়নামাজে’পরিবার ও স্থানীয়দের কাছে বেগম জিয়ার ছোটবেলার গল্পগুলো আজও অমলিন। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি যখন নিজ গ্রামে এসেছিলেন, তখন তার প্রিয় দিঘির মাছ সংগ্রহের জন্য হেলিকপ্টারটিকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখার ঘটনাটি এলাকাবাসীর মুখে মুখে ফেরে। পারিবারিক আড্ডায় ভাইদের সাথে শানবাঁধানো ঘাটে বসে সময় কাটানো কিংবা বড়দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সবই আজ ইতিহাসের অংশ।খালেদা জিয়ার হাত ধরেই শ্রীপুরসহ গোটা এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ও মসজিদ। ২০০৮ সালে শেষবার যখন তিনি এই বাড়িতে এসেছিলেন, তখন তার দাদা হাজী সালামত আলী মজুমদারের কবর জিয়ারত করেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন। আজ তার চিরবিদায়ের খবরে সেই প্রিয় প্রাঙ্গণ ও স্মৃতির স্মারকগুলো যেন এক নিস্তব্ধ শোকে পাথর হয়ে আছে।