২০২৬: নতুন বছরের আলোয় হারানোর বেদনা ভুলে বড় হোক অর্জনের খাতা

আমাদের উদ্বেলিত করে, নতুন উদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায় নতুনের আগমনী বার্তা। নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবো আমরা। ‘যেতে নাহি দিব হায়/তবু যেতে দিতে হয়/তবু চলে যায়’ বিদায় দিতে না চাইলেও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এ পঙক্তির মতো বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর। নতুন বছরের প্রথম সূর্যে যাত্রা শুরু হবে নতুন দিনের। অতীত গ্লানিকে বিদায় দিয়ে নতুন বছর বরণে বিশ্বজুড়ে থাকবে নানা আয়োজন। নিজেদের মতো করে ২০২৬ সালকে স্বাগত জানাবেন বাংলাদেশিরাও। রাত বারোটা এক মিনিটেই শুরু হয় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন। এবার দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এতেও থামেনি ঢাকাবাসীর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন। শহরজুড়ে রাত বারোটার পরই পাওয়া যায় আতশবাজি আর পটকা ফোটানোর বিকট শব্দ। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই হবে ভোরের আবির্ভাব। আনন্দ আর শান্তির বার্তা নিয়ে পূর্ব আকাশে কুয়াশা ভেদ করে উঠে আসবে নতুন দিনের সূর্য। জানান দেবে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনের। প্রথম দিনের এ সূর্যের উদ্দেশ্যেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-প্রথম দিনের সূর্যপ্রশ্ন করেছিলসত্তার নতুনআবির্ভাবেকে তুমি?মেলেনি উত্তর।বৎসর বৎসর চলে গেলো।দিবসের শেষ সূর্যশেষ প্রশ্ন উচ্চারিলপশ্চিম সাগরতীরেনিস্তব্ধ সন্ধ্যায়কে তুমি?পেলো না উত্তর। ২০২৫ সালের শেষ সময়ে এক শোকাতুর পরিবেশে আচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো দেশ। গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, আপসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়েছে কোটি প্রাণ। দেশবাসীর হৃদয়ে শ্রদ্ধার যে আসনে তিনি আসীন ছিলেন, তা প্রমাণ হয়েছে বিদায়বেলায় সবার অঢেল ভালোবাসায়। জনপ্রিয় এই নেত্রীকে জনতা বিদায় জানিয়েছে গভীর মমতা আর পরম শ্রদ্ধায়। এর আগে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দিনে-দুপুরে হত্যায় শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের জনসাধারণ। এ হত্যাকাণ্ড স্তব্ধ করে দেয় কোটি বিপ্লবীর অনাগত সাহসী কণ্ঠস্বরকে। হাদির আত্মত্যাগের গল্প আমাদের এটাই দেখিয়ে দেয় যে, এমনভাবে জীবনযাপন করা উচিত যেন মৃত্যুর পর তার জন্য মানুষের কান্নাই এটা প্রমাণ করে দেয় যে তার আত্মত্যাগ, তার সাহস, তার ভয়ডরহীন দেশপ্রেমের প্রকাশ সবার জন্য কতটা অনুকরণীয় ছিল। এর আগে, সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য। এই সূর্যসন্তানদের হারিয়ে শোকাতুর হয়ে পড়েছিল পুরো জাতি। নদীর এ কূল ভাঙে, ও কূল গড়ে... এরকম একটা গানের লাইন আছে। জননন্দিত খালেদা জিয়া কিংবা তরুণ প্রজন্মের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদিতে যেমন আমরা হারিয়েছি তেমনি দেশজুড়ে, বিশ্বজুড়ে অনেকেই তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, নানা বিষণ্ণতা কিংবা হতাশার ঘটনা ঘটেছে সবার জীবনে। এরপরও পাওয়ার ঝুলিটাও তেমনি ফাঁকা ছিল না। বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক বড় একটি পাওয়া ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক আসামি শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়। এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তৈরি যে ক্ষত, তাতে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়েছে। জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভোটের মাধ্যমে মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পূরণের সুযোগ পাবে। তার প্রিয় মায়ের মৃত্যুর কিছুদিন আগে হলেও ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে নির্বাচনের পালে যেমন আরও জোরে হাওয়া লেগেছে তেমনি বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনের আগে বুক বাঁধছেন নতুন উদ্যমে। আবার একটি দলের পোস্টারবয় হিসেবে তার ফিরে আসা দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের জন্যও এক শুভ বার্তা। রাত শেষে নতুন বছরের প্রথম আলো যখন দেখা যাবে, তখন দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক নতুন শুরুর আনন্দে ভরে উঠবে সবার জীবন। পূর্বসূরিরা যে পথ দেখিয়ে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই সংগ্রামী পথে, ২৪-এর জুলাই-আগস্টের সেই দৃপ্ত-সাহসী বিপ্লবকে পাথেয় করেই বাংলাদেশ দেখবে নবজাগরণের স্বপ্ন। উন্নত, সমৃদ্ধ এক জাতিতে পরিণত হবো আমরা। শুধু ক্যালেন্ডার পাল্টানো নয়, ২০২৬ এর শুরু অনেক নতুনের পুনর্জন্ম। এটা সবার নিজের কাছে, পরিবারের, সমাজের, দেশের কাছে এই অঙ্গীকার হবে যে আমার অতীত ভুল থেকে শিক্ষা আর বিজয়ের গৌরব থেকে অনুপ্রেণা নিয়েই আমাদের অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এএমএ