কাবা শরিফ মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি মক্কার কেন্দ্রে অবস্থিত। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান হজ পালন করতে কাবার উদ্দেশ্যে রওনা হন।কাবাঘর শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। কাবাঘরের গিলাফ, যা ‘কিসওয়া’ নামে পরিচিত, এই পবিত্র স্থানের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। এটি প্রতীকীভাবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। গিলাফের পরিবর্তন এবং তার ইতিহাস কাবাঘরের দীর্ঘকালীন ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মুসলিমদের সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের গভীরতা তুলে ধরে।কাবাঘরে গিলাফ পরানোর প্রথা একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবছর কাবা শরিফের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি নতুন কালো গিলাফ পরানো হয়, যা সোনালী অক্ষরে কোরআনের আয়াতের নিদর্শন বহন করে। গিলাফ তৈরির জন্য রয়েছে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, যা কাবাঘরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরও পড়ুন: বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমে কাবাঘরে গিলাফ পরানোর ইতিহাস নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, ইয়েমেনের বাদশা তুব্বা ইবনে আসআদ আল-হিময়ারি প্রথম কাবাঘরে গিলাফ পরান। তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কাবাঘর ধসে গেছে এবং তিনি সেখানে গিলাফ পরাচ্ছেন। এই স্বপ্নের পর তিনি মক্কায় এসে কাবাঘরের দরজা তৈরি করেন এবং তাতে গিলাফ পরান। ইবনে জুরাইজ থেকে আবুল ওয়ালিদ আল-আজরাকি বর্ণনা করেন যে, রসুল (সা.)ও কাবাঘরে গিলাফ পরিয়েছেন। এরপর, আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) বায়তুল মালের খরচে কাবাঘরে গিলাফ পরান। সিরাতগ্রন্থগুলিতে এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইবনে ইসহাকের মতে, হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ সর্বপ্রথম কাবাঘরকে রেশমি গিলাফে আবৃত করেন। অন্যদিকে, আবদুল্লাহ ইবনে জুুবায়ের কাবাঘরকে গিলাফে আবৃত করার প্রথম ব্যক্তি ছিলেন বলেও দাবি করা হয়। মাওয়ারদি বলেন, বনু হাওয়াজিন গোত্রের খালেদ ইবনে জাফর কাবাঘরকে রেশমি গিলাফে আবৃত করেন, যা কস্তুরী মিশ্রিত ছিল। কিছু গ্রন্থে ইসমাঈল (আ.) এবং তার সন্তান আদনানের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম দারাকুতনিসহ অন্যান্য গবেষকরা বলেন, আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের মা, নাতিলা বিনতে আজনাব, কাবাঘরে গিলাফ পরানোর প্রথম উদ্যোগ নেন। তিনি মানত করেছিলেন যে তার ছেলে আব্বাস ফিরে আসলে কাবাঘরকে লাল গিলাফে আবৃত করবেন। এছাড়াও, খলিফা মুআবিয়া দুইবার কাবাঘরে গিলাফ পরান এবং আশুরার দিনে এটি সম্পন্ন করেন। খলিফা মামুন তিনবার কাবাঘরে গিলাফ পরান এবং তার যুগে বিভিন্ন রঙের গিলাফ পরানোর রীতি প্রচলিত হয়। আব্বাসি খলিফা নাসির প্রথম কাবা শরিফে কালো গিলাফ পরান, যা বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। আরও পড়ুন: বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকা প্রকাশ এই প্রথাগুলি কাবাঘরের মর্যাদা ও পবিত্রতা প্রকাশ করে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। কাবাঘরের গিলাফ শুধুমাত্র একটি আবরণ নয়, বরং এটি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।